আজ বৃহস্পতিবার, ২০শে আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৪ঠা জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে মা-বাবার রুজি-রোজগার বন্ধ হওয়ায় সংসারের হাল ধরলো ১২ বছরের শিশু

বিপ্লব হাসান : করোনা ভাইরাসের কারণে সব কর্মস্থান বন্ধ হওয়ায় অনেকে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন। আবারও অনেকে পুলিশের সাথে চোর পুলিশ খেলে রুজি-রোজগার করছে। করোনা ভাইরাসের বিস্তার রোধে সারা দেশে মাস্কের ব্যবহার বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে এর বিক্রিও। অনেকে আবার মাস্ক বিক্রি করে সংসারও চালাচ্ছেন। ধুলাবালি থেকে বিরত থাকুন, মুখে মাস্ক ব্যবহার করুন, ধুলাবালি থেকে পরিস্কার থাকলে মাস্ক ব্যবহার করুন, নেন নেন মাস্ক নেন। মাত্র ২০ টাকা আর ৩০ টাকায়। এমন হাঁকডাকে মাস্ক বিক্রি করতে দেখা গেছে ১২ বছর বয়সী এক শিশুকে। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার গাউছিয়া এলাকায় ফেরি করে মাস্ক বিক্রি করে মা-বাবাসহ ছোট বোনকে খাওয়াছেন ১২ বছর বয়সী শিশু ইয়াছিন। তার চোখে মুখে যেন সংগ্রামের ছাপ স্পষ্ট। সংগ্রামী শিশু ইয়াছিন হলো, কুমিল্লা জেলার দেবিরদা উপজেলার বলুপপুর এলাকার মোঃ আবুল কালামের ছেলে। বর্তমানে ইয়াছিন তার মা-বাবা ও তার ছোট বোনকে নিয়ে রূপগঞ্জ উপজেলার ভূলতা ইউনিয়নের টেলাপাড়া এলাকার মোজাম্মেলের বাড়িতে ভাড়া থাকেন। ইয়াছিনের বাবা সিএনজি চালক ও মা গাউছিয়া সিটি মার্কেটে সেলাইয়ের কাজ করতেন। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে পুরো রূপগঞ্জ লকডাউন থাকায় তাদের রুজি রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে। তাই তাদের ঘরে কষ্ট দেখা দিয়েছে। ইয়াছিন দারুল উলুম পাঁচাইখা মাদ্রাসায় পড়াশুনা করেন। লকডাউনে মাদ্রাসা বন্ধ থাকায় বাবা-মার কাছে এসেছে। পরিবারের করুন দশা দেখে শিশু ইয়াছিন সইতে না পেরে গাউছিয়া এলাকায় কিছুদিন লেবু বিক্রির ব্যবসা শুরু করলেও সংসারের অভাব দূর করতে পারেনি। তাই ইয়াছিন রাস্তায় রাস্তায় হেঁটে মাস্ক বিক্রিতে নেমে পড়েছেন। কারণ লেবু বিক্রি করতে গেলে পুলিশের ধাওয়া খেতে হয় এবং চাঁদাবাজদের ২০ টাকা করে চাঁদা দিতে হয়। তাই সে এই লকডাউনে মাক্স বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয়। কারণ মাস্ক বিক্রি করলে পুলিশের ধাওয়া খেতে হয় না এবং চাঁদাও দিতে হয় না বরং ভালো দামে বিক্রি করতে পারে। ইয়াছিন এখন মাক্স বিক্রি করে সংসারের অভাব অনটন কিছুটা হলেও দূর করতে পেরেছে। তাই সে অনেক খুশি অনুভব করে। সংগ্রামী শিশু ইয়াছিন জানান, আমরা ভাড়াটিয়া। তাই আমরা কোনো অনুদান পাই না। মা-বাবার কষ্ট দেখে সইতে না পেরে আমি শিশু হয়ে চেয়ারম্যান ও মেম্বারের কাছে অনেক বার গিয়েছিলাম কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। আমি মাদ্রাসায় পড়াশুনা করি, আমি চাই না মা বাবা আমার সামনে কষ্ট করুক,আর না খেয়ে মরে যাক। কেননা মা-বাবা হলেন জান্নাতের চাবি। একটা সন্তানের কারণে যদি মা উফ শব্দ করে তাহলে সে সন্তান কখনো জান্নাতে যেতে পারে না। তাই মা-বাবার জন্য আমি রাস্তায় রাস্তায় মাস্ক বিক্রি করি। ইয়াছিন আরো বলেন, যদি আমি করোনা ভাইরাসের প্রথম থেকে মাস্ক বিক্রি করতাম তাহলে ভালো টাকা আয় করতে পারতাম।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ